জমির মূল্য পরিশোধের পর নিরুপায় ক্রেতাকে বৈধ-অবৈধ দু’খাতে টাকা দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়। সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে দলিল সম্পাদনকালে দিতে হয় ‘অফিস খরচ’। আর কথিত ওই অফিস খরচই হলো সাবরেজিস্ট্রারের নির্ধারণ করা ঘুষ। সরকারি ফি পরিশোধের পর ওই অফিস খরচ দিয়েই এখন সাধারণ মানুষজনকে দলিলপত্র রেজিস্ট্রি করতে হচ্ছে। গাজীপুরের শ্রীপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে অনিয়মের সিন্ডিকেট পূর্বের সাব রেজিস্ট্রার ওসমান গনি মন্ডল দায়িত্বরত থাকা অবস্থায়ও হয়েছে, বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব রেজিস্ট্রার সোহেল রানার আমলেও হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ৭ই নভেম্বর, ২০২২ ইং তারিখে ওসমান গনি মন্ডল শ্রীপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদানের পরপরই ঘুষ বাণিজ্যের নতুন পন্থা অবলম্বন করে দুর্নীতির রামরাজত্ব তৈরি করে। তার জন্ম ১৯৬৬ সালে, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী বিবেচনায় ভূমি অফিসের চাকরি পেয়েছেন ২০০৯ সালে। শুধু তাই নয়, জমি সংক্রান্ত এমন কোনো কাজ ছিলো না যে কাজের জন্য সে ঘুষ নেয় নি- এমনটাই অভিযোগ করেছে সেবাগ্রহীতারা। সম্প্রতি গত ০৩-০২-২০২৫ ইং তারিখে মোঃ নুর ইসলাম, মহা-পরিদর্শক নিবন্ধন অধিদপ্তর কর্তৃক একটি বদলী আদেশে ওসমান গনি মন্ডলকে পাবনা সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে এবং শ্রীপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে মো: সোহেল রানাকে বদলীর আদেশ দেওয়া হয়। যদিও নানা যল্পনা কল্পনার পর ১৭ দিনের ব্যবধানে ওসমান গনি মন্ডল পাবনা সদর থেকে গত ২০-০৩-২০২৫ ইং তারিখে জাদুর কাঠির স্পর্শে গাজীপুর কাপাসিয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বদলী হয়।
ওসমান গনির সাজানো গুছানো ‘অফিস সিস্টেম’ অনুসারীরা এখনও অতীত ভুলতে না পারলেও অতীতের সিস্টেম পলিসির পন্থা অবলম্বন করে ওপেন সিক্রেটে অফিস খরচের নামে চলছে হরিলুট। তবে সাব রেজিস্ট্রার মো: সোহেল রানা যোগদানের পরও আগের চেয়ে কোনো পরিবর্তন নেই, ফের আগের নিয়মেই চলছে অবাধে ঘুষ লেনদেন। নিয়ম অমান্য করে দলিল পরীক্ষা থেকে শুরু করে নিজের অন্যান্য কাজ ওমেদার ও পিওনদের দিয়ে করাচ্ছে।
সাব রেজিস্ট্রার মো: সোহেল রানা গত ২০-১২-২০১৮ ইং তারিখে প্রবেশ পদে যোগদানের পরপরই মাদারীপুরের রাজৈর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় ‘সাংকেতিক চিহ্ন’ দিয়ে ঘুষের হিসাব রাখার অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে ওই সময়ে নানান দেনদরবারের পর পুরো অভিযোগই অস্বীকার করেন। যদিও অফিসের কর্মচারী- দলিল লেখকরা সাব রেজিস্ট্রার সোহেল রানার বিরুদ্ধে অপসারণের দাবীতে মানববন্ধন করে।
এদিকে শ্রীপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ‘অফিস খরচ’ ‘সেরেস্তা খরচ’ নামে চলছে বাড়তি অর্থ আদায়। সরকার নির্ধারিত রেজিস্ট্রি ফির বাইরেও দলিল বাবদ মৌজার রাউন্ড ফিগারে প্রতি লাখে ১ শতাংশ অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে। পরে এই টাকার বেশির ভাগ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। বাকি অংশ যায় দলিল লেখক সমিতিতে। কয়েকজন দলিল লেখকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে অফিশিয়াল ঝামেলা মেটানোর নামে যে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়, তাকেই সেরেস্তা খরচ বলা হয়। অফিসের সঙ্গে দলিল লেখক সমিতির নেতাদের যোগসাজশ থাকার কারণেই অবৈধ সেরেস্তা খরচের টাকা আদায় বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বদনাম হচ্ছে সাধারণ দলিল লেখকদের।
ভুক্তভোগীরা বলেন, অফিস খরচের নামে বাড়তি টাকা আদায়ের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট।
এ প্রসঙ্গে সাব রেজিস্ট্রার মো: সোহেল রানা বলেন, ‘নির্ধারিত ফির বাইরে কোনো টাকা আদায় করা হয়না। যদি কেউ আমার অগোচরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে, সত্যতা পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অফিসের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ কেউ করেনি’।

বিশেষ প্রতিবেদক 



















