ঢাকা ০২:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
কুয়েটে অনবরত আন্দোলন

শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ; আজও ক্লাসে যাননি শিক্ষকেরা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৫৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • ১১৩ বার পড়া হয়েছে

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এখনো অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতিতে অনড় রয়েছেন শিক্ষকরা। আজ সোমবার (১২ মে) টানা ছয় দিন ধরে ক্লাস বন্ধ রয়েছে।

একদিকে শিক্ষকরা বিচারের দাবিতে কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন, অন্যদিকে একাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত শুরুর দাবিতে শিক্ষার্থীরা আজ দুপুরে মানববন্ধন করেছেন। ‘কুয়েট শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে, কারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে। আজ তাদের হাতে এই চিঠি তুলে দেওয়া হয়। যদিও কতজন শিক্ষার্থী এই চিঠি পেয়েছেন, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

 

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার জানান, ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিঠিগুলো দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে কতজন শিক্ষার্থীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ করা শোভনীয় হবে না।”

 

চিঠির সূত্রে জানা যায়, ১৯ ফেব্রুয়ারির সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযুক্তদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। ১৫ মে’র মধ্যে জবাব না দিলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ আছে।

 

এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, সাবেক উপাচার্যের কাছে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন ও তা মানতে চাপ প্রয়োগ, সভাকক্ষে জোরপূর্বক প্রবেশ, শিক্ষক ও উপাচার্যের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ, মিছিল ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি, অশ্লীল স্লোগান এবং প্রশাসনিক ভবনে অনুমতি ছাড়াই ব্যানার লাগানো ও একাডেমিক ভবনে তালা দেওয়া।

 

তবে সব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একরকম অভিযোগ আনা হয়নি। আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, “অভিযোগগুলো পড়ে আমরা বিস্মিত। এগুলো অনেকটাই এক ধরনের এবং আমাদের সঙ্গে প্রহসনের শামিল। তবুও আমরা প্রাথমিকভাবে জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সম্মিলিতভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব।”

 

অন্যদিকে, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন জানান, শিক্ষকরা ৫ মে যে সাত কর্মদিবসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন, তা শেষ হচ্ছে ১৫ মে। তিনি বলেন, “প্রশাসন কাজ করছে, আমরা পর্যবেক্ষণে আছি। আশাবাদী, দ্রুতই সমাধান হবে।”

 

প্রসঙ্গত, ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হয়। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে। উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা পদত্যাগ করেন। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক মো. হযরত আলী কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন।

Tag :

কুয়েটে অনবরত আন্দোলন

শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ; আজও ক্লাসে যাননি শিক্ষকেরা

আপডেট সময় : ১০:৫৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এখনো অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতিতে অনড় রয়েছেন শিক্ষকরা। আজ সোমবার (১২ মে) টানা ছয় দিন ধরে ক্লাস বন্ধ রয়েছে।

একদিকে শিক্ষকরা বিচারের দাবিতে কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন, অন্যদিকে একাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত শুরুর দাবিতে শিক্ষার্থীরা আজ দুপুরে মানববন্ধন করেছেন। ‘কুয়েট শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে, কারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে। আজ তাদের হাতে এই চিঠি তুলে দেওয়া হয়। যদিও কতজন শিক্ষার্থী এই চিঠি পেয়েছেন, তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

 

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার জানান, ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিঠিগুলো দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে কতজন শিক্ষার্থীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ করা শোভনীয় হবে না।”

 

চিঠির সূত্রে জানা যায়, ১৯ ফেব্রুয়ারির সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযুক্তদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। ১৫ মে’র মধ্যে জবাব না দিলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ আছে।

 

এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, সাবেক উপাচার্যের কাছে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন ও তা মানতে চাপ প্রয়োগ, সভাকক্ষে জোরপূর্বক প্রবেশ, শিক্ষক ও উপাচার্যের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ, মিছিল ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান, সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি, অশ্লীল স্লোগান এবং প্রশাসনিক ভবনে অনুমতি ছাড়াই ব্যানার লাগানো ও একাডেমিক ভবনে তালা দেওয়া।

 

তবে সব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একরকম অভিযোগ আনা হয়নি। আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, “অভিযোগগুলো পড়ে আমরা বিস্মিত। এগুলো অনেকটাই এক ধরনের এবং আমাদের সঙ্গে প্রহসনের শামিল। তবুও আমরা প্রাথমিকভাবে জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সম্মিলিতভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব।”

 

অন্যদিকে, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন জানান, শিক্ষকরা ৫ মে যে সাত কর্মদিবসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন, তা শেষ হচ্ছে ১৫ মে। তিনি বলেন, “প্রশাসন কাজ করছে, আমরা পর্যবেক্ষণে আছি। আশাবাদী, দ্রুতই সমাধান হবে।”

 

প্রসঙ্গত, ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হয়। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে। উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা পদত্যাগ করেন। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক মো. হযরত আলী কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন।