জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগে কর্মরত একজন রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে—নাম মুজিবুর রহমান মুজিব। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এনবিআরের ভেতরে ও বাইরে একটি দুর্নীতিবাজ চক্রের কেন্দ্রীয় ফিগার, যার মাধ্যমে বদলি বাণিজ্য, তদবির, বহিরাগত নিয়োগ এবং রাজস্ব কর্মকর্তাদের আন্দোলনে প্ররোচিত করার মতো নানা কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ কাস্টমস অফিসার অ্যাসোসিয়েশন (বাকা এভ)এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঐক্য পরিষদ নামে দুটি সংগঠনের সরকারি কোনো স্বীকৃতি বা নিবন্ধন নেই। অথচ এই সংগঠনের নামেই মুজিবুর রহমান মুজিব নিজেকে ‘নেতা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব খাটিয়ে আসছেন।
রাজস্ব কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়ন, আউটসোর্সিংয়ের জনবল নিয়োগ এবং ভালো সার্কেলে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, মুজিবুর রহমান মুজিব সচরাচর নিজের কক্ষে থাকেন না। বরং এনবিআর চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কক্ষে গিয়ে ফাইল প্রক্রিয়ার তদবির করে থাকেন। বদলি, পদায়ন ও সুবিধাজনক স্থানে পোস্টিংয়ে তিনি সিন্ডিকেট চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে ফ্ল্যাট ও প্লট কেনারও অভিযোগ করেছেন, যার কিছু প্রাথমিক প্রমাণ নথিপত্রে পাওয়া গেছে।
ভিযোগ রয়েছে, মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার অনুসারীরা রাজস্ব কর্মকর্তাদের জোর করে আন্দোলনে নামতে বাধ্য করেছেন, যা সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। ইতিমধ্যে এনবিআরের তরফে এ ধরনের আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং ২৩ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও ২৮৬ জন কর্মকর্তার একটি তালিকা তৈরি হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে, মুজিবুর রহমান মুজিব বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ অভিযোগ বর্তমানে গোয়েন্দা মহলে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মুজিবুর রহমান মুজিব বলেন, “আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
তবে কর্মকর্তাদের একটি অংশ মনে করেন,“এই বক্তব্যের আড়ালে বাস্তবতার একটি ভয়ংকর চিত্র লুকিয়ে আছে।”
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বাংলাদেশ কাস্টম অফিসার অ্যাসোসিয়েশন (বাকা এভ)–এর সহসভাপতি মাহবুব হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এনবিআরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা এখন পুরো বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছি। প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব আহরণে এনবিআরের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সংস্থার ভেতরে দুর্নীতির অভিযোগ সাধারণ মানুষের আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই মুজিবুর রহমান মুজিবের মতো বিতর্কিত কর্মকর্তাদের কার্যক্রম তদন্ত করে দায়ী হলে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনার দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন 















