ঢাকা ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ: রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ঐকমত্যের রূপরেখা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:২২:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’–পরবর্তী বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে কমিশনের তত্ত্বাবধানে এই সনদ প্রণয়ন করা হয়।

সোমবার (২৮ জুলাই) কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, খসড়া সনদটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা ভাষা, কাঠামো ও প্রস্তাবসমূহ যাচাই করে মতামত দিতে পারে।

খসড়ায় বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তা একদিকে বর্তমান স্বৈরশাসনের অবসান ঘটায়, অন্যদিকে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের একটি ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি করে। আন্দোলনে প্রাণ হারান ১৪০০-এর বেশি নাগরিক এবং আহত হন ২০ হাজারের অধিক। এই ত্যাগ ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের দাবিতে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তি রচিত হয়।

সরকার ২০২৪ সালের আগস্টে ছয়টি পৃথক সংস্কার কমিশন গঠন করে:
১. সংবিধান সংস্কার কমিশন
২. নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন
৩. বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
৪. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
৫. পুলিশ সংস্কার কমিশন
৬. দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন

এই কমিশনগুলো ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে সুপারিশ জমা দেয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও সংলাপের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিশন মোট ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে ৩৫টি দলের কাছ থেকে লিখিত মতামত পায়। এরপর মার্চ থেকে মে ২০২৫ পর্যন্ত ৩২টি দলের সঙ্গে ৪৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ২০টি বিষয়ে গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।

সনদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে,

গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বাধ্যতামূলক রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন ও দুর্নীতিবিরোধী কাঠামোতে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হবে।

আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার এই সংস্কার দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

প্রয়োজনীয় সংবিধান ও আইন সংশোধন করে সংস্কারগুলো সংবিধান ও আইনের পূর্ণ সুরক্ষায় আনয়ন করা হবে।

বর্তমানে খসড়াটি রাজনৈতিক দলগুলোর পর্যালোচনার জন্য উন্মুক্ত। যেসব বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হবে, তা সংলাপ শেষে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর চূড়ান্ত সংস্করণে যুক্ত হবে।

Tag :

‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ: রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ঐকমত্যের রূপরেখা

আপডেট সময় : ০৭:২২:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’–পরবর্তী বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া প্রকাশ করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে কমিশনের তত্ত্বাবধানে এই সনদ প্রণয়ন করা হয়।

সোমবার (২৮ জুলাই) কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, খসড়া সনদটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা ভাষা, কাঠামো ও প্রস্তাবসমূহ যাচাই করে মতামত দিতে পারে।

খসড়ায় বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন গড়ে ওঠে, তা একদিকে বর্তমান স্বৈরশাসনের অবসান ঘটায়, অন্যদিকে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের একটি ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি করে। আন্দোলনে প্রাণ হারান ১৪০০-এর বেশি নাগরিক এবং আহত হন ২০ হাজারের অধিক। এই ত্যাগ ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের দাবিতে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তি রচিত হয়।

সরকার ২০২৪ সালের আগস্টে ছয়টি পৃথক সংস্কার কমিশন গঠন করে:
১. সংবিধান সংস্কার কমিশন
২. নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন
৩. বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
৪. জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
৫. পুলিশ সংস্কার কমিশন
৬. দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন

এই কমিশনগুলো ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে সুপারিশ জমা দেয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও সংলাপের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিশন মোট ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে ৩৫টি দলের কাছ থেকে লিখিত মতামত পায়। এরপর মার্চ থেকে মে ২০২৫ পর্যন্ত ৩২টি দলের সঙ্গে ৪৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ২০টি বিষয়ে গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।

সনদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে,

গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বাধ্যতামূলক রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন ও দুর্নীতিবিরোধী কাঠামোতে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হবে।

আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার এই সংস্কার দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

প্রয়োজনীয় সংবিধান ও আইন সংশোধন করে সংস্কারগুলো সংবিধান ও আইনের পূর্ণ সুরক্ষায় আনয়ন করা হবে।

বর্তমানে খসড়াটি রাজনৈতিক দলগুলোর পর্যালোচনার জন্য উন্মুক্ত। যেসব বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হবে, তা সংলাপ শেষে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর চূড়ান্ত সংস্করণে যুক্ত হবে।