ঢাকা ১২:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৭:২৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
  • ১৭৫ বার পড়া হয়েছে

নানা প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের চতুর্থ দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন)। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় এই বৈঠক, যেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সংক্রান্ত বিষয় ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে ছয়টি সংস্কার কমিশনের জমা দেওয়া ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানার লক্ষ্যে সংলাপ শুরু করে। প্রথম ধাপে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৫টি অধিবেশনে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হয় ২ জুন। কোরবানির ঈদের ছুটির পর মঙ্গলবার (১৭ জুন) থেকে দ্বিতীয় ধাপের মূল আলোচনা ফের শুরু হয়, যা বৃহস্পতিবার গড়ায় চতুর্থ দিনে।

বৃহস্পতিবারের আলোচনায় উঠে আসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি ও ক্ষমতার কাঠামো। আগের দিন রাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা অসমাপ্ত থাকায় এদিন তা থেকেই শুরু হয়। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, “গতকালের আলোচনায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বিষয়টি এসেছিল। আজ সেখান থেকেই আমরা আলোচনা শুরু করেছি। জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “কিছু বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য এসেছে, কিছু বিষয়ে এখনও মতভেদ রয়েছে। এই আলোচনা আরও কিছুদিন চলবে। আগামী সপ্তাহে অমীমাংসিত বিষয়ের ওপর আবার বসতে হবে।”

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ছাড়াও এদিনের আলোচনায় ছিল প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ, সংবিধানের মূলনীতি এবং নির্বাচনী এলাকা পুনঃনির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এতে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক নেতারা প্রস্তাব দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্য টানা মেয়াদের সীমা নির্ধারণ এবং নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে রাষ্ট্রপতির ভূমিকাকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

এই সংলাপে অংশ নেয় ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, এলডিপি, সিপিবি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, লেবার পার্টি, জাতীয় দল, জেএসডি, খেলাফত মজলিস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ন্যাপ।

বিএনপির পক্ষ থেকে অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ; জামায়াতের পক্ষ থেকে ডা. তাহের, রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ; গণসংহতির পক্ষ থেকে জুনায়েদ সাকি, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, জেএসডির শহিদ উদ্দিন স্বপনসহ আরও অনেকে।

কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

বৈঠক শেষে অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের জানান, “যেসব বিষয়ে এখনও মতপার্থক্য রয়েছে, সেগুলো নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা চাই জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ চূড়ান্ত হোক। এজন্য অংশগ্রহণকারী দলগুলোর উদারতা ও যুক্তিনির্ভর মত প্রকাশ জরুরি।”

অংশগ্রহণকারী অনেক রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানানো হয়। বৈঠক শেষে দলগুলোর পক্ষ থেকে আলাদাভাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার কথা রয়েছে।

Tag :

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন

আপডেট সময় : ০৭:২৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

নানা প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের চতুর্থ দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন)। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় এই বৈঠক, যেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সংক্রান্ত বিষয় ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে ছয়টি সংস্কার কমিশনের জমা দেওয়া ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানার লক্ষ্যে সংলাপ শুরু করে। প্রথম ধাপে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৫টি অধিবেশনে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হয় ২ জুন। কোরবানির ঈদের ছুটির পর মঙ্গলবার (১৭ জুন) থেকে দ্বিতীয় ধাপের মূল আলোচনা ফের শুরু হয়, যা বৃহস্পতিবার গড়ায় চতুর্থ দিনে।

বৃহস্পতিবারের আলোচনায় উঠে আসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি ও ক্ষমতার কাঠামো। আগের দিন রাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা অসমাপ্ত থাকায় এদিন তা থেকেই শুরু হয়। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, “গতকালের আলোচনায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার বিষয়টি এসেছিল। আজ সেখান থেকেই আমরা আলোচনা শুরু করেছি। জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “কিছু বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য এসেছে, কিছু বিষয়ে এখনও মতভেদ রয়েছে। এই আলোচনা আরও কিছুদিন চলবে। আগামী সপ্তাহে অমীমাংসিত বিষয়ের ওপর আবার বসতে হবে।”

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ছাড়াও এদিনের আলোচনায় ছিল প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ, সংবিধানের মূলনীতি এবং নির্বাচনী এলাকা পুনঃনির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এতে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক নেতারা প্রস্তাব দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্য টানা মেয়াদের সীমা নির্ধারণ এবং নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে রাষ্ট্রপতির ভূমিকাকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

এই সংলাপে অংশ নেয় ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, এলডিপি, সিপিবি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, লেবার পার্টি, জাতীয় দল, জেএসডি, খেলাফত মজলিস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ন্যাপ।

বিএনপির পক্ষ থেকে অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ; জামায়াতের পক্ষ থেকে ডা. তাহের, রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ; গণসংহতির পক্ষ থেকে জুনায়েদ সাকি, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, জেএসডির শহিদ উদ্দিন স্বপনসহ আরও অনেকে।

কমিশনের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

বৈঠক শেষে অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের জানান, “যেসব বিষয়ে এখনও মতপার্থক্য রয়েছে, সেগুলো নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা চাই জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ চূড়ান্ত হোক। এজন্য অংশগ্রহণকারী দলগুলোর উদারতা ও যুক্তিনির্ভর মত প্রকাশ জরুরি।”

অংশগ্রহণকারী অনেক রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানানো হয়। বৈঠক শেষে দলগুলোর পক্ষ থেকে আলাদাভাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার কথা রয়েছে।