ঢাকা ০৩:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মিলারদের দাদন বাণিজ্যে চালের বাজারে অস্থিরতা, বস্তায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৬:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
  • ১২২ বার পড়া হয়েছে

বোরো মৌসুমে কৃষকের মাঠ থেকে ধান কিনে মিলাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় চালের বাজারে অস্বাভাবিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। খুচরা বাজারে এক কেজি মোটা চালের দাম ৬০ টাকায় পৌঁছেছে, যা তিন মাস আগেও ছিল ৫৫ টাকা। সরু চালের দাম প্রতি কেজি ৯০ টাকা ছুঁয়েছে। অথচ সরকারি গুদামে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত থাকা সত্ত্বেও বাজারে তেমন কোনো কার্যকর তদারকি নেই। ফলে বাজার কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে মিলাররা।

চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা বোরোর মৌসুমেই কৃষকের কাছ থেকে ধান দাদনের মাধ্যমে আগাম কিনে রেখেছেন। পরে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে নিজেরাই চালের দাম বাড়াচ্ছেন।
নওগাঁ, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন মিল থেকে জানা গেছে, মিনিকেট চালের ৫০ কেজি বস্তা তিন মাস আগেও যেখানে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হতো, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৮০০–৩৯০০ টাকায়। নাজিরশাইল, বিআর-২৮ এবং স্বর্ণা জাতের চালেও একইভাবে ২০০–৩০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।

ঢাকার কাওরানবাজার, বাদামতলী, মালিবাগসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে। মিনিকেট কেজিপ্রতি ৮৫–৮৭ টাকা, নাজিরশাইল ৯০ টাকা, বিআর-২৮ এবং পাইজাম ৬৫ টাকা এবং মোটা চাল (স্বর্ণা) বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

মালিবাগ কাঁচাবাজারে চাল কিনতে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “বোরো মৌসুমে দাম কমার কথা। কিন্তু এখন উল্টো দাম বাড়ছে। বাজারে যেন কোনো নজরদারি নেই।”

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি গুদামে চালের মজুত ছিল প্রায় ২০ লাখ টন। অথচ বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে তদারকি ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “আমরা তিন স্তরে তদারকি করছি। ঈদের পর থেকে বাজার মনিটরিং চলছে। কেউ অবৈধভাবে দাম বাড়ালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “বোরো মৌসুমে চালের দাম বাড়া অস্বাভাবিক। মিলারদের সিন্ডিকেট ঠেকাতে সরকারকে আরও কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।”

📉 মূল্যবৃদ্ধির চিত্র (সাম্প্রতিক বনাম ৩ মাস আগের তুলনা):

চালের ধরন ওজন পুরনো দাম (৩ মাস আগে) বর্তমান দাম মূল্যবৃদ্ধি
মিনিকেট ৫০ কেজি ৩৫০০ টাকা ৩৮০০–৩৯০০ টাকা ৩০০ টাকা পর্যন্ত
নাজিরশাইল ২৫ কেজি ১৮০০ টাকা ২০০০–২১৫০ টাকা ২০০–৩৫০ টাকা
বিআর ২৮ ৫০ কেজি ২৭০০ টাকা ২৯০০–২৯৫০ টাকা ২০০–২৫০ টাকা
স্বর্ণা (মোটা) ৫০ কেজি ২৫০০ টাকা ২৭০০–২৭৫০ টাকা ২০০–২৫০ টাকা
Tag :

মিলারদের দাদন বাণিজ্যে চালের বাজারে অস্থিরতা, বস্তায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি

আপডেট সময় : ০৬:৫৬:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

বোরো মৌসুমে কৃষকের মাঠ থেকে ধান কিনে মিলাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় চালের বাজারে অস্বাভাবিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। খুচরা বাজারে এক কেজি মোটা চালের দাম ৬০ টাকায় পৌঁছেছে, যা তিন মাস আগেও ছিল ৫৫ টাকা। সরু চালের দাম প্রতি কেজি ৯০ টাকা ছুঁয়েছে। অথচ সরকারি গুদামে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত থাকা সত্ত্বেও বাজারে তেমন কোনো কার্যকর তদারকি নেই। ফলে বাজার কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে মিলাররা।

চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা বোরোর মৌসুমেই কৃষকের কাছ থেকে ধান দাদনের মাধ্যমে আগাম কিনে রেখেছেন। পরে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে নিজেরাই চালের দাম বাড়াচ্ছেন।
নওগাঁ, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন মিল থেকে জানা গেছে, মিনিকেট চালের ৫০ কেজি বস্তা তিন মাস আগেও যেখানে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হতো, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৮০০–৩৯০০ টাকায়। নাজিরশাইল, বিআর-২৮ এবং স্বর্ণা জাতের চালেও একইভাবে ২০০–৩০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।

ঢাকার কাওরানবাজার, বাদামতলী, মালিবাগসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে। মিনিকেট কেজিপ্রতি ৮৫–৮৭ টাকা, নাজিরশাইল ৯০ টাকা, বিআর-২৮ এবং পাইজাম ৬৫ টাকা এবং মোটা চাল (স্বর্ণা) বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

মালিবাগ কাঁচাবাজারে চাল কিনতে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “বোরো মৌসুমে দাম কমার কথা। কিন্তু এখন উল্টো দাম বাড়ছে। বাজারে যেন কোনো নজরদারি নেই।”

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি গুদামে চালের মজুত ছিল প্রায় ২০ লাখ টন। অথচ বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে তদারকি ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “আমরা তিন স্তরে তদারকি করছি। ঈদের পর থেকে বাজার মনিটরিং চলছে। কেউ অবৈধভাবে দাম বাড়ালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “বোরো মৌসুমে চালের দাম বাড়া অস্বাভাবিক। মিলারদের সিন্ডিকেট ঠেকাতে সরকারকে আরও কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।”

📉 মূল্যবৃদ্ধির চিত্র (সাম্প্রতিক বনাম ৩ মাস আগের তুলনা):

চালের ধরন ওজন পুরনো দাম (৩ মাস আগে) বর্তমান দাম মূল্যবৃদ্ধি
মিনিকেট ৫০ কেজি ৩৫০০ টাকা ৩৮০০–৩৯০০ টাকা ৩০০ টাকা পর্যন্ত
নাজিরশাইল ২৫ কেজি ১৮০০ টাকা ২০০০–২১৫০ টাকা ২০০–৩৫০ টাকা
বিআর ২৮ ৫০ কেজি ২৭০০ টাকা ২৯০০–২৯৫০ টাকা ২০০–২৫০ টাকা
স্বর্ণা (মোটা) ৫০ কেজি ২৫০০ টাকা ২৭০০–২৭৫০ টাকা ২০০–২৫০ টাকা