ঢাকা ১২:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাজারে বেড়েছে বেশ কিছু নিত্যপণ্যর দাম: ক্রেতার হাঁসফাঁস

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৮:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
  • ৩৯ বার পড়া হয়েছে

গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজ, ডাল, আটা, মুরগির ডিম, সোনালি মুরগি, মাছ ও বেশ কিছু সবজির দাম সর্বোচ্চ ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। এতে ক্রেতাদের মাঝে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আয়ের সঙ্গে সংগতি না থাকায় অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৭.৫৬ শতাংশ, জুন মাসে যা ছিল ৭.৩৯ শতাংশ।

রাজধানীর খুচরা বাজার এবং সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির ১৪ আগস্ট ও ১৪ জুলাইয়ের বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে এক মাসের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে ১৫০ টাকায় উঠেছে।

দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। দেশি মসুর ডালের দাম কেজিতে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে এখন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। খোলা আটার দাম কেজিতে ১২ শতাংশ বেড়ে ৪৫ টাকা। সোনালি মুরগির দাম এমনিতেই বাড়তি ছিল, নতুন করে ৭ থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে এখন ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজারে সব ধরনের মাছ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের রুই মাছের দাম এক মাসের ব্যবধানে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে প্রতিকেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা হয়েছে। সরবরাহসংকটে বাজারে এখন আলু ও পেঁপে ছাড়া সব ধরনের সবজি বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দাম কেজিতে ২৫ থেকে ৩৩ শতাংশ বেড়ে মানভেদে (লম্বা ও গোল বেগুন) ১০০ থেকে ১৪০ টাকা হয়েছে। রাজধানীর কোনো কোনো বাজারে গোল বেগুন কেজি ১৮০ টাকা। টমেটোর মৌসুম না হওয়ায় সবজিটির দাম চড়া। গত এক মাসে টমেটোর দাম কেজিতে ১৪ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়ে মানভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মুদি দোকানদার মো. সুজন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত এক মাসে বাজারে পেঁয়াজ, ডিম, ডাল ও খোলা আটার দাম বেড়েছে। ১৩০ টাকা ডজনের ডিম ১৫০ টাকা হয়েছে। একইভাবে পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। হঠাৎ দেশি মসুর ডালের দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খোলা আটার দাম ৫০ কেজির বস্তায় ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’

ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে প্রায় প্রত্যেকটি পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। চাল, ডাল, তেল, সবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংস-ডিম কোনো কিছুর দামই স্থিতিশীল নেই। শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণিও আজ নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় হিমশিম খাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, আমদানিনির্ভরতা, ডলারসংকট, সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত এবং অদক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণ সব মিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। অনেক ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুদদারির কারণে দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।’

অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজির হাট মহাস্থানের তথ্য বলছে, পাইকারিতে গতকাল বেগুন বিক্রি হয়েছে ২৬০০-২৮০০ টাকা মণ দরে। অথচ দুই মাস আগে এই বেগুন ছিল ১০০০-১১০০ টাকা। করলা ছিল ১২০০-১৪০০ টাকা মণ, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩২০০ টাকা; বরবটি ছিল ৩২ টাকা কেজি, এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে; শসা আগে ছিল ৫০০-৬০০ টাকা মণ, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০০-১৮০০ টাকা দরে।

Tag :

বাজারে বেড়েছে বেশ কিছু নিত্যপণ্যর দাম: ক্রেতার হাঁসফাঁস

আপডেট সময় : ০৮:৩৮:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজ, ডাল, আটা, মুরগির ডিম, সোনালি মুরগি, মাছ ও বেশ কিছু সবজির দাম সর্বোচ্চ ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। এতে ক্রেতাদের মাঝে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আয়ের সঙ্গে সংগতি না থাকায় অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৭.৫৬ শতাংশ, জুন মাসে যা ছিল ৭.৩৯ শতাংশ।

রাজধানীর খুচরা বাজার এবং সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির ১৪ আগস্ট ও ১৪ জুলাইয়ের বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে এক মাসের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে ১৫০ টাকায় উঠেছে।

দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। দেশি মসুর ডালের দাম কেজিতে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে এখন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। খোলা আটার দাম কেজিতে ১২ শতাংশ বেড়ে ৪৫ টাকা। সোনালি মুরগির দাম এমনিতেই বাড়তি ছিল, নতুন করে ৭ থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে এখন ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজারে সব ধরনের মাছ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের রুই মাছের দাম এক মাসের ব্যবধানে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে প্রতিকেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা হয়েছে। সরবরাহসংকটে বাজারে এখন আলু ও পেঁপে ছাড়া সব ধরনের সবজি বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দাম কেজিতে ২৫ থেকে ৩৩ শতাংশ বেড়ে মানভেদে (লম্বা ও গোল বেগুন) ১০০ থেকে ১৪০ টাকা হয়েছে। রাজধানীর কোনো কোনো বাজারে গোল বেগুন কেজি ১৮০ টাকা। টমেটোর মৌসুম না হওয়ায় সবজিটির দাম চড়া। গত এক মাসে টমেটোর দাম কেজিতে ১৪ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়ে মানভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মুদি দোকানদার মো. সুজন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত এক মাসে বাজারে পেঁয়াজ, ডিম, ডাল ও খোলা আটার দাম বেড়েছে। ১৩০ টাকা ডজনের ডিম ১৫০ টাকা হয়েছে। একইভাবে পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। হঠাৎ দেশি মসুর ডালের দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খোলা আটার দাম ৫০ কেজির বস্তায় ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’

ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে প্রায় প্রত্যেকটি পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। চাল, ডাল, তেল, সবজি থেকে শুরু করে মাছ-মাংস-ডিম কোনো কিছুর দামই স্থিতিশীল নেই। শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণিও আজ নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় হিমশিম খাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, আমদানিনির্ভরতা, ডলারসংকট, সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত এবং অদক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণ সব মিলিয়ে এক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। অনেক ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুদদারির কারণে দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।’

অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজির হাট মহাস্থানের তথ্য বলছে, পাইকারিতে গতকাল বেগুন বিক্রি হয়েছে ২৬০০-২৮০০ টাকা মণ দরে। অথচ দুই মাস আগে এই বেগুন ছিল ১০০০-১১০০ টাকা। করলা ছিল ১২০০-১৪০০ টাকা মণ, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩২০০ টাকা; বরবটি ছিল ৩২ টাকা কেজি, এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে; শসা আগে ছিল ৫০০-৬০০ টাকা মণ, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০০-১৮০০ টাকা দরে।