বাংলাদেশে চিকিৎসকদের উপঢৌকন দিয়ে নিজেদের ওষুধ বাজারজাত করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি। এসব উপহার ও প্রণোদনার ফলে চিকিৎসকরা অনেক সময় মানহীন, অপ্রয়োজনীয় ও ব্যয়বহুল ওষুধ লিখে দিচ্ছেন, যা সরাসরি রোগীর ওপর আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত চাপ বাড়াচ্ছে।
উপঢৌকনের মধ্যে রয়েছে—নগদ অর্থ, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, বিদেশ সফর, ফার্নিচার, এসি-ফ্রিজ, মোবাইল ফোন এমনকি বিয়ের খরচ বহন পর্যন্ত। এ কারণে দেশের বহু চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের (মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ) কাছে কার্যত ‘জিম্মি’ হয়ে পড়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, “বাংলাদেশে যেভাবে ওষুধের মার্কেটিং হচ্ছে, তা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনীয় নয়। এতে ওষুধ উৎপাদনের খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি রোগীর ব্যয়ও ৩০–৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে বিএমডিসি প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “এ ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম কখনোই কাম্য নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রেশন স্থগিত বা বাতিল পর্যন্ত করা হতে পারে।”
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ওষুধ কোম্পানির দেওয়া উপহার সামগ্রীর দ্বিতীয় বাজার দেখা গেছে। চিকিৎসকদের কাছ থেকে এসব উপহার কম দামে কিনে বিক্রি করছেন দোকানিরা। এতে যেমন ডাক্তাররা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, তেমনি কোম্পানিগুলোর বিপণন খরচ বেড়ে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে।
অশুভ প্রতিযোগিতার কারণে ইতোমধ্যে গ্লাক্সো স্মিথ, স্যানোফি–এর মতো আন্তর্জাতিক মানের কোম্পানি বাংলাদেশের বাজার ছেড়ে গেছে। কারণ, তারা অনৈতিক উপঢৌকন সংস্কৃতি অনুসরণ করে না।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান জানান, “এ ধরনের অনৈতিক চর্চা বন্ধে মন্ত্রণালয় থেকে দুই মাসের স্বল্পমেয়াদি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

অনলাইন ডেস্ক 















