ঢাকা ০১:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘনে শাস্তি বাড়ছে, আইন সংশোধনের উদ্যোগ খসড়া তৈরি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৮:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ পুনঃসংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সংশোধিত আইনে আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাবসহ, উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের শিক্ষাগত যোগ্যতা, ট্রাস্টি বোর্ডের গঠন, ভবনের আয়তন, শিক্ষক নিয়োগের শর্তসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নতুন খসড়া অনুযায়ী, আইনের লঙ্ঘনে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা (অথবা উভয় দণ্ড) দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী আইনে ১০ লাখ টাকার জরিমানা ছিল।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “আইনটি সংশোধনের কাজ চলছে এবং আশা করা যাচ্ছে, এটি শিগগিরই চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।”

সংশোধিত আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের আয়তন ২৫ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ১ লাখ বর্গফুট করার প্রস্তাব করা হয়েছে, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমির পরিমাণ ১ একর থেকে ৫ একর করার প্রস্তাব রয়েছে। তবে, ২০২৪ সালের আগে অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমির পরিমাণের শিথিলতা থাকবে।

এছাড়া, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সংরক্ষিত তহবিলের পরিমাণ দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এমনকি, স্থায়ী সনদহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য সংশোধিত আইনে নতুন শর্ত যোগ করা হয়েছে। সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী সনদ গ্রহণ না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।

ট্রাস্টি বোর্ডের ক্ষমতায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাবেও নতুন খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২১ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ সদস্য শিক্ষাবিদ বা শিক্ষানুরাগী হতে হবে এবং সরকার অনুমোদন ছাড়া বোর্ড পরিবর্তন করা যাবে না। একইসাথে, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত আরও কঠোর করা হয়েছে। এর মধ্যে, পিএইচডি ডিগ্রি বা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ-৪ স্কেলে ৩.৫ নম্বরের প্রমাণ থাকতে হবে। এছাড়া, উপাচার্য দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তন হলো, খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা সীমিত করা হবে, যাতে তা পূর্ণকালীন শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি না হয়। নতুন আইনে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপনের জন্য সরকারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিম বলেন, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন উদ্যোগটি সাধুবাদযোগ্য, তবে শাস্তি বাড়ানো সমাধান নয়। আইনটির সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি।”

এ ছাড়া, সংশোধিত আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে ‘জাতীয়’ বা ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দ ব্যবহার না করার এবং প্রতি তিন মাসে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করার বিষয়ে নতুন শর্ত প্রস্তাব করা হয়েছে।

Tag :

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘনে শাস্তি বাড়ছে, আইন সংশোধনের উদ্যোগ খসড়া তৈরি

আপডেট সময় : ০৬:৪৮:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ পুনঃসংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সংশোধিত আইনে আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাবসহ, উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের শিক্ষাগত যোগ্যতা, ট্রাস্টি বোর্ডের গঠন, ভবনের আয়তন, শিক্ষক নিয়োগের শর্তসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।

নতুন খসড়া অনুযায়ী, আইনের লঙ্ঘনে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা (অথবা উভয় দণ্ড) দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী আইনে ১০ লাখ টাকার জরিমানা ছিল।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “আইনটি সংশোধনের কাজ চলছে এবং আশা করা যাচ্ছে, এটি শিগগিরই চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।”

সংশোধিত আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের আয়তন ২৫ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ১ লাখ বর্গফুট করার প্রস্তাব করা হয়েছে, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমির পরিমাণ ১ একর থেকে ৫ একর করার প্রস্তাব রয়েছে। তবে, ২০২৪ সালের আগে অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমির পরিমাণের শিথিলতা থাকবে।

এছাড়া, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সংরক্ষিত তহবিলের পরিমাণ দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এমনকি, স্থায়ী সনদহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য সংশোধিত আইনে নতুন শর্ত যোগ করা হয়েছে। সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী সনদ গ্রহণ না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।

ট্রাস্টি বোর্ডের ক্ষমতায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাবেও নতুন খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২১ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ সদস্য শিক্ষাবিদ বা শিক্ষানুরাগী হতে হবে এবং সরকার অনুমোদন ছাড়া বোর্ড পরিবর্তন করা যাবে না। একইসাথে, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত আরও কঠোর করা হয়েছে। এর মধ্যে, পিএইচডি ডিগ্রি বা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ-৪ স্কেলে ৩.৫ নম্বরের প্রমাণ থাকতে হবে। এছাড়া, উপাচার্য দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।

আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তন হলো, খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা সীমিত করা হবে, যাতে তা পূর্ণকালীন শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি না হয়। নতুন আইনে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপনের জন্য সরকারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিম বলেন, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন উদ্যোগটি সাধুবাদযোগ্য, তবে শাস্তি বাড়ানো সমাধান নয়। আইনটির সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি।”

এ ছাড়া, সংশোধিত আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে ‘জাতীয়’ বা ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দ ব্যবহার না করার এবং প্রতি তিন মাসে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করার বিষয়ে নতুন শর্ত প্রস্তাব করা হয়েছে।