ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলাম সাগরের মৃত্যুর খবরে রাজশাহীজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
রাজশাহী শহরের উপশহরের ‘আশ্রয়’ ভবনের সামনে স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, কেউ বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন পাইলট তৌকিরের শূন্য ঘরের দিকে চেয়ে।
তৌকিরের পরিবার থাকেন উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের ২২৩ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায়। তার বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন, ও ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন শোকসন্তপ্ত অবস্থায় আছেন।
তৌকিরের পৈতৃক বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নে। ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছোট বোন সৃষ্টি ইসলামিক ব্যাংক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। বছর খানেক আগে তৌকিরের বিয়ে হয়। তাঁর স্ত্রী ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক।
তৌকিরের শৈশব ও শিক্ষা জীবন রাজশাহীতেই কাটে। নিউ গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর সপ্তম শ্রেণিতে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করে যোগ দেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে।
তৌকিরের মামা রফিকুল ইসলাম জানান, বিমানবাহিনীর একক প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে অংশ নেওয়ার খবর পেয়ে পরিবারে আনন্দ ছিল। কিন্তু দুপুরে দুর্ঘটনার সংবাদে সবকিছু বদলে যায়। শুরুতে জানানো হয়েছিল, সাগর ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। কিন্তু পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন।
তৌকিরের বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় নেওয়া হয়। শেষবারের মতো ছেলেকে দেখতে রওনা হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁরা জানতেন না—তৌকির আর বেঁচে নেই।
তৌকিরের সাবেক শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, “ও ছিল মেধাবী, ভদ্র, নীরব এক ছাত্র। অসময়ে তার এ চলে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারছি না।”
গত বছর সপুরা এলাকায় নিজের জমিতে তিনতলা বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছিলেন তৌকির। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে গেল।
আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবারের (২১ জুলাই) বিমান দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২০ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলাম সাগর অন্যতম।

অনলাইন ডেস্ক 















