ঢাকা ১১:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: ডোপ টেস্টের কিট সংকট, ভোগান্তিতে সেবাপ্রার্থীরা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:১৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
  • ৫২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর মাধ্যমে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ডোপ টেস্ট (মাদক গ্রহণ সম্পর্কিত পরীক্ষা) এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সংকটের মুখে পড়েছে। ফলে সেবাপ্রার্থীরা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

গত সপ্তাহে, মো. আতিকুল ইসলাম নামের একজন পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএ-তে আবেদন করেন। সেখানে ডোপ টেস্টের নির্দেশনা দেওয়া হয়, যার পর তিনি রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) যান। কিন্তু ল্যাবের সামনে নোটিশে দেখতে পান “কিট শেষ হওয়ায় ডোপ টেস্ট বন্ধ”। আতিকুল ইসলাম এরপর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় মাদক নিরাময় হাসপাতালে টেস্টের জন্য নমুনা দিতে সক্ষম হন।

এমনই সংকটের মুখে পড়ছেন হাজারও লোক, যারা এই টেস্ট করাতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে জানানো হয়েছে, কিট সংকটের কারণে তারা টেস্ট করতে পারছেন না এবং হাসপাতালগুলোর মধ্যে এই সংকট বিস্তার লাভ করেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে থাকা কিট সরবরাহের বিষয়টি। হাসপাতালগুলোর মধ্যে, বিশেষত জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে, কিটের সংকট দীর্ঘদিন ধরে চলমান। হাসপাতাল পরিচালকেরা জানাচ্ছেন, “যত দ্রুত সম্ভব নতুন কিট সংগ্রহ না করা হলে এই সংকট আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।”

নিটোরের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মাহমুদ বলেন, “আগে দিনে ১৫০-২০০ জনের ডোপ টেস্ট করা হতো, কিন্তু কিটের স্টক শেষ হওয়ায় বর্তমানে টেস্ট বন্ধ রয়েছে।”

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম সাহাবুদ্দিন আহামদ জানান, কোভিডের সময় শুরু হওয়া একটি প্রজেক্টের আওতায় অনেক বেশি জনবল ছিল, কিন্তু প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পর জনবল সংকটের কারণে বর্তমানে আগের মতো চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু আহসান মো. মঈনুল হোসেন বলেন, “যেসব হাসপাতালে ডোপ টেস্টের নির্দেশনা রয়েছে, সেখানে কিট সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয় এমএসআর বাজেট থেকে। সংকট থাকলে সেটি হাসপাতাল পরিচালকের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান হতে হবে।”

ডোপ টেস্ট আসলে মাদকাসক্তি পরীক্ষার একটি পদ্ধতি, যেখানে শরীরে মাদকের উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়। এটি বিশেষ করে ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ নানা কাজের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে। নিয়মিত মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণকারী ব্যক্তির শরীরে এই পদার্থের উপস্থিতি কিছুটা সময় ধরে থাকে এবং তা ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে।

এ সংকটের কারণে লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীরা বাড়তি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। রোগীদের জন্য এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে তাদেরকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হবে।

Tag :

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স: ডোপ টেস্টের কিট সংকট, ভোগান্তিতে সেবাপ্রার্থীরা

আপডেট সময় : ০৬:১৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর মাধ্যমে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ডোপ টেস্ট (মাদক গ্রহণ সম্পর্কিত পরীক্ষা) এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সংকটের মুখে পড়েছে। ফলে সেবাপ্রার্থীরা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

গত সপ্তাহে, মো. আতিকুল ইসলাম নামের একজন পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএ-তে আবেদন করেন। সেখানে ডোপ টেস্টের নির্দেশনা দেওয়া হয়, যার পর তিনি রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) যান। কিন্তু ল্যাবের সামনে নোটিশে দেখতে পান “কিট শেষ হওয়ায় ডোপ টেস্ট বন্ধ”। আতিকুল ইসলাম এরপর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় মাদক নিরাময় হাসপাতালে টেস্টের জন্য নমুনা দিতে সক্ষম হন।

এমনই সংকটের মুখে পড়ছেন হাজারও লোক, যারা এই টেস্ট করাতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে জানানো হয়েছে, কিট সংকটের কারণে তারা টেস্ট করতে পারছেন না এবং হাসপাতালগুলোর মধ্যে এই সংকট বিস্তার লাভ করেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে থাকা কিট সরবরাহের বিষয়টি। হাসপাতালগুলোর মধ্যে, বিশেষত জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে, কিটের সংকট দীর্ঘদিন ধরে চলমান। হাসপাতাল পরিচালকেরা জানাচ্ছেন, “যত দ্রুত সম্ভব নতুন কিট সংগ্রহ না করা হলে এই সংকট আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।”

নিটোরের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মাহমুদ বলেন, “আগে দিনে ১৫০-২০০ জনের ডোপ টেস্ট করা হতো, কিন্তু কিটের স্টক শেষ হওয়ায় বর্তমানে টেস্ট বন্ধ রয়েছে।”

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম সাহাবুদ্দিন আহামদ জানান, কোভিডের সময় শুরু হওয়া একটি প্রজেক্টের আওতায় অনেক বেশি জনবল ছিল, কিন্তু প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পর জনবল সংকটের কারণে বর্তমানে আগের মতো চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু আহসান মো. মঈনুল হোসেন বলেন, “যেসব হাসপাতালে ডোপ টেস্টের নির্দেশনা রয়েছে, সেখানে কিট সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয় এমএসআর বাজেট থেকে। সংকট থাকলে সেটি হাসপাতাল পরিচালকের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান হতে হবে।”

ডোপ টেস্ট আসলে মাদকাসক্তি পরীক্ষার একটি পদ্ধতি, যেখানে শরীরে মাদকের উপস্থিতি সনাক্ত করা হয়। এটি বিশেষ করে ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ নানা কাজের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে। নিয়মিত মাদক বা অ্যালকোহল গ্রহণকারী ব্যক্তির শরীরে এই পদার্থের উপস্থিতি কিছুটা সময় ধরে থাকে এবং তা ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে।

এ সংকটের কারণে লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীরা বাড়তি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। রোগীদের জন্য এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে তাদেরকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হবে।