ঢাকা ১২:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজস্ব কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনের সম্পদের পাহাড়

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০২:২৮:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
  • ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে

আলতাফ হোসেন কাস্টমস বিভাগের একজন রাজস্ব কর্মকর্তা। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে ১১ (এগার) বছর পূর্বে চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। দশম গ্রেডের কর্মকর্তা। ক্ষেত্রবিশেষে ১১ বা তার নিচের গ্রেডও হতে পারে।

বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জের ফুলহাতা গ্রামের বাসিন্দা কাস্টমস এর বহুল আলোচিত এই আলতাফ হোসেন টাকার কুমির। পৈত্রিক সূত্রে মোড়লগঞ্জের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে তিনি মুন্সীগঞ্জের কোটায় চাকরি করছেন বলে তথ্য রয়েছে। এই ব্যাপারে আলতাফ হোসেনের মোবাইলে ফোন করে ও হোয়াটস অ্যাপে তথ্য জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলেও তিনি যোগাযোগ করেননি।

অতি সম্প্রতি এনবিআরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য আলতাফ হোসেন ও তার সিন্ডিকেট এনবিআর এর আন্দোলনে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে এবং আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছে। আন্দোলনে তার অংশগ্রহনের ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য প্রমাণ বর্তমান অর্থনীতির হাতে এসেছে।

১০ম গ্রেডের একজন সামান্য কর্মকর্তা হিসেবে প্রাপ্য বেতনে তার ঢাকা শহরে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করাই যেখানে দূরহ ঠিক সেখানে আলতাফ হোসেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় গড়ে তুলেছেন একাধিক ফ্ল্যাট। তার সারা জীবনের চাকরিকালীন বেতন সর্বসাকুল্যে ৩০-৩৫ লাখ টাকা হতে পারে; অথচ তিনি সম্পদ করেছেন কোটি টাকার। উল্লেখ্য যে, ১০ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তার সর্বসাকুল্যে বেতন ৩৮,৬৪০ (আটত্রিশ হাজার ছয়শত চল্লিশ) টাকা।

বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, আলতাফ হোসেনের অর্জিত সম্পদের তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ। আপাদমস্তক দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন, অত্যন্ত ক্ষমতাধর ও দুর্নীতির বরপুত্র আলতাফ হোসেন বিভিন্নজনের নিকট বলেছেন, টাকা হলে দুদককে কেনা যায়। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও দুদকের কর্মকর্তাদের ব্যাপারেও বিরূপ মন্তব্য করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা এই তথ্য দেন।

সূত্র মতে, এনবিআর এর একজন সাবেক ক্ষমতাধর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সুপারিশে আলতাফ চাকরিতে যোগদান করেন বলে জানা গেছে। ঐ কর্মকর্তার দাপটে তিনি এনবিআর এ অদম্য ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন। শুধু তাই নয়, ঐ কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ডও বনে যান।

চাকরি জীবনের শুরুতে সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা পদে কিশোরগঞ্জে তার পদায়ন করা হয়। এরপর খুলনা, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর ও সর্বশেষ চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে তার পদায়ন।

তিনি একজন আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি তার সহকর্মীদের নিকট বলে থাকেন ঊধ্বতন কর্মকর্তারা যেখানে ঘুষ ছাড়া ফাইল ছাড়েন না এবং অপরদিকে নজরানা দিতে হয় সেক্ষেত্রে আমাদের দুর্নীতি করতে বাধা কোথায়?

গণমাধ্যমকে তিনি মোটেও পরোয়া করেন না। আমাদের অনুসন্ধানী টিম যাত্রাবাড়ির দনিয়ার ৩০০/১, পূর্ব রসুলপুর ঠিকানায় তার একটি আলিশান ফ্ল্যাটের সন্ধান পায়। অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় রসুলপুরের মাস্টার বাড়ীতে নির্মানাধীন ১১ তলা ভবনের ৯ম তলায় তার আরও একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়াও স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে বিভিন্ন স্থানে সম্পদ ও ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে বলে জানা গেছে।

একজন সামান্য রাজস্ব কর্মকর্তার সম্পদ দেখে এই অনুসন্ধানী টিম হতবাক। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে চাকরিপ্রাপ্ত আলতাফ হোসেন অত্যন্ত ক্ষমতাধর। তার রয়েছে আলাদা সিন্ডিকেট। পুরো সিন্ডিকেটটি দুর্নীতির কারিগর।

Tag :

রাজস্ব কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনের সম্পদের পাহাড়

আপডেট সময় : ০২:২৮:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

আলতাফ হোসেন কাস্টমস বিভাগের একজন রাজস্ব কর্মকর্তা। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে ১১ (এগার) বছর পূর্বে চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। দশম গ্রেডের কর্মকর্তা। ক্ষেত্রবিশেষে ১১ বা তার নিচের গ্রেডও হতে পারে।

বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জের ফুলহাতা গ্রামের বাসিন্দা কাস্টমস এর বহুল আলোচিত এই আলতাফ হোসেন টাকার কুমির। পৈত্রিক সূত্রে মোড়লগঞ্জের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে তিনি মুন্সীগঞ্জের কোটায় চাকরি করছেন বলে তথ্য রয়েছে। এই ব্যাপারে আলতাফ হোসেনের মোবাইলে ফোন করে ও হোয়াটস অ্যাপে তথ্য জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলেও তিনি যোগাযোগ করেননি।

অতি সম্প্রতি এনবিআরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য আলতাফ হোসেন ও তার সিন্ডিকেট এনবিআর এর আন্দোলনে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে এবং আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছে। আন্দোলনে তার অংশগ্রহনের ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য প্রমাণ বর্তমান অর্থনীতির হাতে এসেছে।

১০ম গ্রেডের একজন সামান্য কর্মকর্তা হিসেবে প্রাপ্য বেতনে তার ঢাকা শহরে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করাই যেখানে দূরহ ঠিক সেখানে আলতাফ হোসেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় গড়ে তুলেছেন একাধিক ফ্ল্যাট। তার সারা জীবনের চাকরিকালীন বেতন সর্বসাকুল্যে ৩০-৩৫ লাখ টাকা হতে পারে; অথচ তিনি সম্পদ করেছেন কোটি টাকার। উল্লেখ্য যে, ১০ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তার সর্বসাকুল্যে বেতন ৩৮,৬৪০ (আটত্রিশ হাজার ছয়শত চল্লিশ) টাকা।

বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, আলতাফ হোসেনের অর্জিত সম্পদের তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ। আপাদমস্তক দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন, অত্যন্ত ক্ষমতাধর ও দুর্নীতির বরপুত্র আলতাফ হোসেন বিভিন্নজনের নিকট বলেছেন, টাকা হলে দুদককে কেনা যায়। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও দুদকের কর্মকর্তাদের ব্যাপারেও বিরূপ মন্তব্য করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা এই তথ্য দেন।

সূত্র মতে, এনবিআর এর একজন সাবেক ক্ষমতাধর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সুপারিশে আলতাফ চাকরিতে যোগদান করেন বলে জানা গেছে। ঐ কর্মকর্তার দাপটে তিনি এনবিআর এ অদম্য ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন। শুধু তাই নয়, ঐ কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ডও বনে যান।

চাকরি জীবনের শুরুতে সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা পদে কিশোরগঞ্জে তার পদায়ন করা হয়। এরপর খুলনা, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর ও সর্বশেষ চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে তার পদায়ন।

তিনি একজন আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি তার সহকর্মীদের নিকট বলে থাকেন ঊধ্বতন কর্মকর্তারা যেখানে ঘুষ ছাড়া ফাইল ছাড়েন না এবং অপরদিকে নজরানা দিতে হয় সেক্ষেত্রে আমাদের দুর্নীতি করতে বাধা কোথায়?

গণমাধ্যমকে তিনি মোটেও পরোয়া করেন না। আমাদের অনুসন্ধানী টিম যাত্রাবাড়ির দনিয়ার ৩০০/১, পূর্ব রসুলপুর ঠিকানায় তার একটি আলিশান ফ্ল্যাটের সন্ধান পায়। অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় রসুলপুরের মাস্টার বাড়ীতে নির্মানাধীন ১১ তলা ভবনের ৯ম তলায় তার আরও একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়াও স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে বিভিন্ন স্থানে সম্পদ ও ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে বলে জানা গেছে।

একজন সামান্য রাজস্ব কর্মকর্তার সম্পদ দেখে এই অনুসন্ধানী টিম হতবাক। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে চাকরিপ্রাপ্ত আলতাফ হোসেন অত্যন্ত ক্ষমতাধর। তার রয়েছে আলাদা সিন্ডিকেট। পুরো সিন্ডিকেটটি দুর্নীতির কারিগর।