ঢাকা ০১:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুমের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাহউদ্দিন আহমেদ

  • অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:১৮:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
  • ৩৭ বার পড়া হয়েছে

২০১৫ সালে ‘গুম’ হওয়া ও পরে ভারত থেকে উদ্ধার—এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। অভিযোগে তিনি শুধু নিজের অভিজ্ঞতা নয়, বরং গুম-খুনের শিকার আরও অনেকের বিচার দাবিও তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

অভিযোগ জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে সালাহউদ্দিন বলেন, “গুম ও খুনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।” তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে কমিশনের সঙ্গে তিনি আগেই যোগাযোগ করেছেন এবং পূর্বঘোষণা অনুযায়ী হাজির হয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিরা আমাকে তুলে নেয়। এরপর দীর্ঘ ৬১ দিন আমাকে অজ্ঞাতস্থানে আটকে রাখে। পরে ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে আমাকে মেঘালয়ে ফেলে দেওয়া হয়।”

তার ভাষ্য অনুযায়ী, যে রুমে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই স্থানের বিবরণসহ ঘটনার বিস্তারিত তিনি কমিশনের কাছে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “এখানে শুধু আমি নয়, আরও অসংখ্য গুমের শিকার মানুষের পরিবার বিচার চাইছে। এসব ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

গুম-খুনের পেছনে দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তার মতে, “গুম ও খুনের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঘটনা সালাহউদ্দিনের রাজনৈতিক জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছে। গুমের ৬২ দিন পর, ২০১৫ সালের ১১ মে, ভারতীয় রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে উদভ্রান্ত অবস্থায় স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা হয়। এই মামলায় ২০১৮ সালে তিনি খালাস পেলেও ভারতের সরকার আপিল করায় তাকে সেখানে আরও দীর্ঘ সময় থাকতে হয়।

অবশেষে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলে খালাস পাওয়ার পর আদালত তাকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন। পরে ৮ মে তিনি আসাম রাজ্য সরকারের কাছে ভ্রমণ অনুমোদনের আবেদন করেন। প্রায় আট বছরের প্রবাসজীবন শেষে ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর ১১ আগস্ট দেশে ফিরে আসেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ।

এই অভিযোগের মাধ্যমে তিনি শুধু ব্যক্তিগত ন্যায়বিচারই নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার সব নাগরিকের অধিকার রক্ষার একটি বৃহত্তর দাবি তুলেছেন।

Tag :

গুমের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাহউদ্দিন আহমেদ

আপডেট সময় : ০৮:১৮:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

২০১৫ সালে ‘গুম’ হওয়া ও পরে ভারত থেকে উদ্ধার—এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। অভিযোগে তিনি শুধু নিজের অভিজ্ঞতা নয়, বরং গুম-খুনের শিকার আরও অনেকের বিচার দাবিও তুলে ধরেন।

মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

অভিযোগ জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে সালাহউদ্দিন বলেন, “গুম ও খুনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।” তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে কমিশনের সঙ্গে তিনি আগেই যোগাযোগ করেছেন এবং পূর্বঘোষণা অনুযায়ী হাজির হয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিরা আমাকে তুলে নেয়। এরপর দীর্ঘ ৬১ দিন আমাকে অজ্ঞাতস্থানে আটকে রাখে। পরে ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে আমাকে মেঘালয়ে ফেলে দেওয়া হয়।”

তার ভাষ্য অনুযায়ী, যে রুমে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই স্থানের বিবরণসহ ঘটনার বিস্তারিত তিনি কমিশনের কাছে দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “এখানে শুধু আমি নয়, আরও অসংখ্য গুমের শিকার মানুষের পরিবার বিচার চাইছে। এসব ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।”

গুম-খুনের পেছনে দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তার মতে, “গুম ও খুনের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, এই ঘটনা সালাহউদ্দিনের রাজনৈতিক জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছে। গুমের ৬২ দিন পর, ২০১৫ সালের ১১ মে, ভারতীয় রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে উদভ্রান্ত অবস্থায় স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা হয়। এই মামলায় ২০১৮ সালে তিনি খালাস পেলেও ভারতের সরকার আপিল করায় তাকে সেখানে আরও দীর্ঘ সময় থাকতে হয়।

অবশেষে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলে খালাস পাওয়ার পর আদালত তাকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন। পরে ৮ মে তিনি আসাম রাজ্য সরকারের কাছে ভ্রমণ অনুমোদনের আবেদন করেন। প্রায় আট বছরের প্রবাসজীবন শেষে ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর ১১ আগস্ট দেশে ফিরে আসেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ।

এই অভিযোগের মাধ্যমে তিনি শুধু ব্যক্তিগত ন্যায়বিচারই নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার সব নাগরিকের অধিকার রক্ষার একটি বৃহত্তর দাবি তুলেছেন।