ঢাকা ০৩:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এনবিআর নিয়ে কী হচ্ছে ?

চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বিসিএস কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ঘোষণা

এনবিআর নিয়ে কী হচ্ছে?চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বিসিএস কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ঘোষণ।

► ঘটনা-১: ০৯ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রি. তারিখে এনবিআর সংস্কারে পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করে তাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এনবিআরে র সকল কর্মকর্তা কর্মচারী সবাই স্বাগত জানিয়েছে।

► ঘটনা-২: ২২ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়। এই প্রতিবেদন কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। প্রচার মাধ্যম থেকে যে সুপারিশগুলো পাওয়া গিয়েছিল সেটাও এনবিআর কর্তৃপক্ষ স্বাগত জানিয়েছে।

► ঘটনা-৩: সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ পাওয়ার কয়েক দিন পর সম্ভাব্য অধ্যাদেশের একটি খসড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ পায় সেই খসড়া নিয়েও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোনো আপত্তি করেনি। কারণ, আপাত পর্যালোচনায় সেখানে প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত সুপারিশগুলোর প্রতিফলন ছিল।

► ঘটনা-৪: এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ১৩ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব কর্তৃক সত্যায়িত আরেকটি খসড়া অধ্যাদেশ সামনে আসে। এই খসড়া অধ্যাদেশ ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। আগের খসড়া অধ্যাদেশের সাথে এর মিল নেই। মিল নেই পত্রপত্রিকায় আসা পরামর্শক কমিটির সুপারিশের সাথেও। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব কর্মচারীরা প্রতিবাদ জানানো শুরু করে। বিসিএস ক্যাডার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে আমাদের পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানো হয়।

► ঘটনা-৪: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ এফবিসিসিআইয়ের এক অনুষ্ঠানে সম্মানিত অর্থ উপদেষ্টা এনবিআর প্রস্তাবনা আর পর্যবেক্ষণের বিপরীতে বলেন, এখন তো এটা অধ্যাদেশ হয়েও গেছে, অধ্যাদেশ তো আর আমি কিছু করতে পারব না।’ প্রকৃত তথ্য হলো- অধ্যাদেশ জারি হয় তারও ১২ দিন পরে। অর্থ্যাৎ, অধ্যাদেশ হয়ে গেছে এই তথ্যটি সঠিক ছিল না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই যে, ১২ ই মে ২০২৫ অধ্যাদশ জারি হলেও এটা আসলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ পায় ১৩ মে দিবাগত রাতে। এ যেন মধ্যরাতের অধ্যাদেশ।

► ঘটনা-৫: ১৩ মে তারিখে থেকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ এর ডাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আংশিক কলমবিরতি পালন করে এবং আন্দোলন চলমান-চলছে ঐক্য পরিষদের দাবি ছিল ৩টি। (১) অধ্যাদশ বাতিল করতে হবে। (২) পরামর্শক কমিটির সুপারিশ প্রকাশ করতে হবে। (৩) সকল অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে প্রকৃত ও টেকসই রাজস্ব সংস্কার করতে হবে। এখান উল্লেখযোগ্য বড় দাবি দেখা দিয়েছে চেয়ারম্যানের আব্দুর রহমান খান এর অপসারণ উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের অ্যাসোসিয়েশনের ঐক্য পরিষদের দাবি এই চারটি বিষয়ে দেখা দিয়েছে। এ বিষয়গুলি বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সকল স্থানের কর্মকর্তা কর্মচারী ও ব্যবসায়ী সকল স্তরের রাজস্ব কর্মচারীদের নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ এর আন্দোলন চালিয়ে যাবে এরই মধ্যে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞগণ, অর্থনীতিবিদগণ ও প্রতিষ্ঠান বিতর্কিত অধ্যাদেশ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। টকশোতে সুপারিশ কমিটির সদস্যরা এসে পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে, তাঁদের সুপারিশের বিপরীত ধারা অধ্যাদেশে স্থান পেয়েছে। সিপিডি, টিআইবি লিখিত বিবৃতি দিয়ে অধ্যাদেশের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

► ঘটনা-৬: আংশিক কলমবিরতির পরিপ্রেক্ষিতে ২০ মে ২০২৫ সম্মানিত অর্থ উপদেষ্টা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঐক্য পরিষদের সাথে বসবেন বলে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্য পরিষদের সদস্য ২০ তারিখ কলমবিরতি স্থগিত করেন। কিন্তু ১৯ তারিখ রাতেই প্রচার মাধ্যমে অর্থ উপদেষ্টা বলেন- তিনি কোনো কম্প্রমাইজ করবেন না। পরের দিন পত্রিকায় দেখতে পায় সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন- জনগণ যে কর দেয়, তার একটা অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হয় না; আদায়কারী কর্মকর্তাদের পকেটে চলে যায়। এ প্রসঙ্গে জনগণ যে কর দেয় তা শতভাগ ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়; করের টাকা আদায়কারীর পকেটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

► ঘটনা-৭: অর্থ উপদেষ্টা মহোদয়ের নেতিবাচক মন্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে, আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না। কারণ, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছেন। তারপরও একটি প্রতিনিধি দল নির্ধারিত সময়ে সভায় অংশ নেন। সেখানে তিনি প্রকৃত অর্থেই প্রতিনিধি দলের কাউকে কথা বলার সুযোগ দেননি বরং অর্থ উপদেষ্টা খারাপ আচরণের মাধ্যমে ঐক্য পরিষদের সদস্যগণকে অপমানিত করেন তার প্রেক্ষিতে আরো আন্দোলন দ্রুত গতিবেগের মাধ্যমে শুরু হয়। ঐক্য পরিষদের আন্দোলন অবস্থান কতটা নেতিবাচক ছিল তা বোঝা যাবে তার মন্তব্যে। কোট করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান এর উস্কানিতে ৬-৭ মিনিটের বেশি মিটিংয়ে সময় দেবে না কেবিনেট সচিবি এবং জনপ্রশাসন সচিবের সাথে আরেকটি মিটিং আছে, আব্দুর রহমান খান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঐক্য পরিষদের সদস্যগণকে উল্লেখ করে বলেন আমি আপনাদের সময় দিতে পারবো না সচিবালয় ফাইল ক্যাবিনেট সচিব তাদের বসিয়ে রাখতে পারব না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান এর উস্কানিমূলক

সভা ফলপ্রসূ না হলেও প্রচার মাধ্যমে এটি ফলপ্রসূ হয়েছে।এ মর্মে অসত্য তথ্য প্রচার করা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি, আন্দোলন থেকে সরে আসেন।’ সাংবাদিকেরা পাল্টা জানতে চান- তারা কী বলেছে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘তারা কী বলুক, না বলুক, আমার আসে যায় না।

এই হলো ঘটনাপ্রবাহ। এর মধ্যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঐক্য পরিষদ সেপারেশন চায় না, সংস্কার চায় না, অটোমেশন চায় না ইত্যাদি। অথচ, এনবিআরের মাঠ পর্যায় থেকেই এই দাবিগুলো আগে এসেছে। অটোমেশন যতটুকু হয়েছে ততটুকু এনবিআরের কর্মচারীদের উদ্যোগেই হয়েছে।

আবার, হাসিনার আমলের কৌশলে ট্যাগস দেওয়া হয়েছে- এই আন্দোলন ছাত্রলীগ করত এমন কর্মকর্তাদের আন্দোলন। এরা সবাই দুর্নীতিবাজ। অথচ, শুরু থেকেই এনবিআরের যৌক্তিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করা চেয়ারম্যানই আওয়ামী আমলের সচিব।

আমাদের দাবি পানির মতো পরিষ্কার। রাজস্ব নিয়ে লুকোচুরির অপরাজনীতি মানি না। পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জাতির সামনে প্রকাশ করুন। বিশেষজ্ঞ লোকদের মতামত নিন, সকল অংশীজনের মতামত নেন। সেই মোতাবেক এনবিআর সংস্কার করুন, নীতি বিভাগ আলাদা করুন। আমরা দুর্নীতি করলে তদন্ত করে বিচার করুন। আমাদের জবাবদিহিতা আরও কঠোর করুন।

তবু, রাজস্ব নিয়ে ছেলেখেলা আর করবেন না। টেকনিক্যাল ক্যাডারে নন টেকনিক্যাল ও তথাকথিত সিভিল সার্ভিসধারীদের বসিয়ে আর দেশ ও দেশের মানুষের সর্বনাশ করবেন না চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান তথাকথিত এই সিভিল সার্ভিসধারীরাই আজ এই দেশের বারোটা বাজিয়েছে সেটা সবাই জানে।

এনবিআরে এ পর্যন্ত ৩১ জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা কারা? তাঁরা এই সম্পূর্ণ টেকনিক্যাল আর প্রফেশনাল সংস্থার দায়িত্ব নিয়েছেন রাজস্ব বিষয়ে বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই! স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্ব নিয়ে তাঁরা অথৈ সাগরে পড়েছেন। সেই সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে রাজস্ব নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। একেক জনের গড় মেয়াদ ১.৭ বছর মাত্র। একজনের নীতি আরেকজন বাতিল করেছেন।

২০-২৫ বছর চাকরি করা আয়কর-ভ্যাট-কাস্টমসের রাজস্ব সৈনিকদেরকেও দেখি প্রতিনিয়ত আইন নিয়ে নানা ঝামেলায় পড়তে; কারণ রাজস্ব আইন, বিধি, প্রজ্ঞাপন এগুলো এতটাই টেকনিক্যাল। ১.৭ বছরে রাজস্ব আইন, বিধি, অসংখ্য এসআরও আয়ত্তে তাঁরা নিয়েছেন কীভাবে? আদৌ কি নিতে পেরেছেন? যেকোনো বাচ্চা ছেলেও এর উত্তর জানে। এখানেই আসলে সবচেয়ে বড়ো সংস্কার প্রয়োজন।

সুতরাং, সংস্কার হোক। যৌক্তিক, মানসম্মত ও সকলের অংশগ্রহণমূলক সংস্কারের মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড স্বাধীন ও আরও শক্তিশালী হোক— এই প্রত্যাশা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর ঐক্য পরিষদ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের।

Tag :

এনবিআর নিয়ে কী হচ্ছে ?

চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বিসিএস কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ঘোষণা

আপডেট সময় : ০৫:৩০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

এনবিআর নিয়ে কী হচ্ছে?চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বিসিএস কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ঘোষণ।

► ঘটনা-১: ০৯ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রি. তারিখে এনবিআর সংস্কারে পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করে তাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এনবিআরে র সকল কর্মকর্তা কর্মচারী সবাই স্বাগত জানিয়েছে।

► ঘটনা-২: ২২ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়। এই প্রতিবেদন কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। প্রচার মাধ্যম থেকে যে সুপারিশগুলো পাওয়া গিয়েছিল সেটাও এনবিআর কর্তৃপক্ষ স্বাগত জানিয়েছে।

► ঘটনা-৩: সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ পাওয়ার কয়েক দিন পর সম্ভাব্য অধ্যাদেশের একটি খসড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ পায় সেই খসড়া নিয়েও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোনো আপত্তি করেনি। কারণ, আপাত পর্যালোচনায় সেখানে প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত সুপারিশগুলোর প্রতিফলন ছিল।

► ঘটনা-৪: এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ১৩ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব কর্তৃক সত্যায়িত আরেকটি খসড়া অধ্যাদেশ সামনে আসে। এই খসড়া অধ্যাদেশ ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। আগের খসড়া অধ্যাদেশের সাথে এর মিল নেই। মিল নেই পত্রপত্রিকায় আসা পরামর্শক কমিটির সুপারিশের সাথেও। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব কর্মচারীরা প্রতিবাদ জানানো শুরু করে। বিসিএস ক্যাডার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে আমাদের পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানো হয়।

► ঘটনা-৪: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ এফবিসিসিআইয়ের এক অনুষ্ঠানে সম্মানিত অর্থ উপদেষ্টা এনবিআর প্রস্তাবনা আর পর্যবেক্ষণের বিপরীতে বলেন, এখন তো এটা অধ্যাদেশ হয়েও গেছে, অধ্যাদেশ তো আর আমি কিছু করতে পারব না।’ প্রকৃত তথ্য হলো- অধ্যাদেশ জারি হয় তারও ১২ দিন পরে। অর্থ্যাৎ, অধ্যাদেশ হয়ে গেছে এই তথ্যটি সঠিক ছিল না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই যে, ১২ ই মে ২০২৫ অধ্যাদশ জারি হলেও এটা আসলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ পায় ১৩ মে দিবাগত রাতে। এ যেন মধ্যরাতের অধ্যাদেশ।

► ঘটনা-৫: ১৩ মে তারিখে থেকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ এর ডাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আংশিক কলমবিরতি পালন করে এবং আন্দোলন চলমান-চলছে ঐক্য পরিষদের দাবি ছিল ৩টি। (১) অধ্যাদশ বাতিল করতে হবে। (২) পরামর্শক কমিটির সুপারিশ প্রকাশ করতে হবে। (৩) সকল অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে প্রকৃত ও টেকসই রাজস্ব সংস্কার করতে হবে। এখান উল্লেখযোগ্য বড় দাবি দেখা দিয়েছে চেয়ারম্যানের আব্দুর রহমান খান এর অপসারণ উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের অ্যাসোসিয়েশনের ঐক্য পরিষদের দাবি এই চারটি বিষয়ে দেখা দিয়েছে। এ বিষয়গুলি বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সকল স্থানের কর্মকর্তা কর্মচারী ও ব্যবসায়ী সকল স্তরের রাজস্ব কর্মচারীদের নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ এর আন্দোলন চালিয়ে যাবে এরই মধ্যে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞগণ, অর্থনীতিবিদগণ ও প্রতিষ্ঠান বিতর্কিত অধ্যাদেশ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। টকশোতে সুপারিশ কমিটির সদস্যরা এসে পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে, তাঁদের সুপারিশের বিপরীত ধারা অধ্যাদেশে স্থান পেয়েছে। সিপিডি, টিআইবি লিখিত বিবৃতি দিয়ে অধ্যাদেশের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

► ঘটনা-৬: আংশিক কলমবিরতির পরিপ্রেক্ষিতে ২০ মে ২০২৫ সম্মানিত অর্থ উপদেষ্টা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঐক্য পরিষদের সাথে বসবেন বলে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্য পরিষদের সদস্য ২০ তারিখ কলমবিরতি স্থগিত করেন। কিন্তু ১৯ তারিখ রাতেই প্রচার মাধ্যমে অর্থ উপদেষ্টা বলেন- তিনি কোনো কম্প্রমাইজ করবেন না। পরের দিন পত্রিকায় দেখতে পায় সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন- জনগণ যে কর দেয়, তার একটা অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হয় না; আদায়কারী কর্মকর্তাদের পকেটে চলে যায়। এ প্রসঙ্গে জনগণ যে কর দেয় তা শতভাগ ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়; করের টাকা আদায়কারীর পকেটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

► ঘটনা-৭: অর্থ উপদেষ্টা মহোদয়ের নেতিবাচক মন্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যে, আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না। কারণ, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছেন। তারপরও একটি প্রতিনিধি দল নির্ধারিত সময়ে সভায় অংশ নেন। সেখানে তিনি প্রকৃত অর্থেই প্রতিনিধি দলের কাউকে কথা বলার সুযোগ দেননি বরং অর্থ উপদেষ্টা খারাপ আচরণের মাধ্যমে ঐক্য পরিষদের সদস্যগণকে অপমানিত করেন তার প্রেক্ষিতে আরো আন্দোলন দ্রুত গতিবেগের মাধ্যমে শুরু হয়। ঐক্য পরিষদের আন্দোলন অবস্থান কতটা নেতিবাচক ছিল তা বোঝা যাবে তার মন্তব্যে। কোট করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান এর উস্কানিতে ৬-৭ মিনিটের বেশি মিটিংয়ে সময় দেবে না কেবিনেট সচিবি এবং জনপ্রশাসন সচিবের সাথে আরেকটি মিটিং আছে, আব্দুর রহমান খান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঐক্য পরিষদের সদস্যগণকে উল্লেখ করে বলেন আমি আপনাদের সময় দিতে পারবো না সচিবালয় ফাইল ক্যাবিনেট সচিব তাদের বসিয়ে রাখতে পারব না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান এর উস্কানিমূলক

সভা ফলপ্রসূ না হলেও প্রচার মাধ্যমে এটি ফলপ্রসূ হয়েছে।এ মর্মে অসত্য তথ্য প্রচার করা হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি, আন্দোলন থেকে সরে আসেন।’ সাংবাদিকেরা পাল্টা জানতে চান- তারা কী বলেছে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘তারা কী বলুক, না বলুক, আমার আসে যায় না।

এই হলো ঘটনাপ্রবাহ। এর মধ্যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঐক্য পরিষদ সেপারেশন চায় না, সংস্কার চায় না, অটোমেশন চায় না ইত্যাদি। অথচ, এনবিআরের মাঠ পর্যায় থেকেই এই দাবিগুলো আগে এসেছে। অটোমেশন যতটুকু হয়েছে ততটুকু এনবিআরের কর্মচারীদের উদ্যোগেই হয়েছে।

আবার, হাসিনার আমলের কৌশলে ট্যাগস দেওয়া হয়েছে- এই আন্দোলন ছাত্রলীগ করত এমন কর্মকর্তাদের আন্দোলন। এরা সবাই দুর্নীতিবাজ। অথচ, শুরু থেকেই এনবিআরের যৌক্তিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করা চেয়ারম্যানই আওয়ামী আমলের সচিব।

আমাদের দাবি পানির মতো পরিষ্কার। রাজস্ব নিয়ে লুকোচুরির অপরাজনীতি মানি না। পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জাতির সামনে প্রকাশ করুন। বিশেষজ্ঞ লোকদের মতামত নিন, সকল অংশীজনের মতামত নেন। সেই মোতাবেক এনবিআর সংস্কার করুন, নীতি বিভাগ আলাদা করুন। আমরা দুর্নীতি করলে তদন্ত করে বিচার করুন। আমাদের জবাবদিহিতা আরও কঠোর করুন।

তবু, রাজস্ব নিয়ে ছেলেখেলা আর করবেন না। টেকনিক্যাল ক্যাডারে নন টেকনিক্যাল ও তথাকথিত সিভিল সার্ভিসধারীদের বসিয়ে আর দেশ ও দেশের মানুষের সর্বনাশ করবেন না চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান তথাকথিত এই সিভিল সার্ভিসধারীরাই আজ এই দেশের বারোটা বাজিয়েছে সেটা সবাই জানে।

এনবিআরে এ পর্যন্ত ৩১ জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা কারা? তাঁরা এই সম্পূর্ণ টেকনিক্যাল আর প্রফেশনাল সংস্থার দায়িত্ব নিয়েছেন রাজস্ব বিষয়ে বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই! স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্ব নিয়ে তাঁরা অথৈ সাগরে পড়েছেন। সেই সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে রাজস্ব নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। একেক জনের গড় মেয়াদ ১.৭ বছর মাত্র। একজনের নীতি আরেকজন বাতিল করেছেন।

২০-২৫ বছর চাকরি করা আয়কর-ভ্যাট-কাস্টমসের রাজস্ব সৈনিকদেরকেও দেখি প্রতিনিয়ত আইন নিয়ে নানা ঝামেলায় পড়তে; কারণ রাজস্ব আইন, বিধি, প্রজ্ঞাপন এগুলো এতটাই টেকনিক্যাল। ১.৭ বছরে রাজস্ব আইন, বিধি, অসংখ্য এসআরও আয়ত্তে তাঁরা নিয়েছেন কীভাবে? আদৌ কি নিতে পেরেছেন? যেকোনো বাচ্চা ছেলেও এর উত্তর জানে। এখানেই আসলে সবচেয়ে বড়ো সংস্কার প্রয়োজন।

সুতরাং, সংস্কার হোক। যৌক্তিক, মানসম্মত ও সকলের অংশগ্রহণমূলক সংস্কারের মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড স্বাধীন ও আরও শক্তিশালী হোক— এই প্রত্যাশা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর ঐক্য পরিষদ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের।